সিলেট বিভাগ: সৌন্দর্য, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন | Sylhet Division: A unique fusion of beauty, history, and tradition.
![]() |
Sylhet Division |
সিলেট বিভাগ: সৌন্দর্য, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন | Sylhet Division: A unique fusion of beauty, history, and tradition.
উপস্থাপনা:
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট বিভাগ। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ - এই চারটি জেলা নিয়ে গঠিত সিলেট বিভাগ। পর্যটন কেন্দ্রের দিক থেকে এই বিভাগ প্রকৃতির এক অপরূপ
লীলাভূমি। সবুজ চা বাগান, মেঘে ঢাকা পাহাড়, স্বচ্ছ পানির নদী আর দিগন্ত বিস্তৃত
হাওরের এক অপূর্ব সমন্বয় এই বিভাগকে করেছে অনন্য। এটি শুধু
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং এর সমৃদ্ধ
ইতিহাস,
ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিকতার জন্যও পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয়
গন্তব্য।
১। সিলেট জেলা | Sylhet District | ৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভূমি :
সিলেটকে বলা হয় বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী। বিশিষ্ট ইসলাম প্রচারক হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ
(রহ.) এর মাজার শরীফ এই জেলাকে দিয়েছে এক বিশেষ পরিচিতি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে
প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই পূণ্যভূমিতে আসেন দর্শন করতে।
🚣দর্শনীয় স্থান:
🏨হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার: সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই মাজারটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে সম্মানিত ও
পবিত্র স্থানগুলোর একটি।
🏨হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার: হযরত শাহজালাল (রহ.) এর অন্যতম সঙ্গী ও ভাগ্নে হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজারটিও
পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
🏨জাফলং: "প্রকৃতির কন্যা" হিসেবে পরিচিত জাফলং মূলত পাথর কোয়ারির জন্য বিখ্যাত। মেঘালয়ের
পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানির পিয়াইন নদী আর তার তীরে ছড়িয়ে থাকা নুড়ি পাথর
জাফলংকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা।
🏨রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট: বাংলাদেশের একমাত্র স্বীকৃত মিঠাপানির জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট এটি। এই বনের ভেতর দিয়ে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা এককথায় অসাধারণ।
🏨বিছানাকান্দি: মেঘালয়
পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বিছানাকান্দি স্বচ্ছ পানির নদী আর পাথরের এক অপূর্ব
সমাহার। এটি ভ্রমণ পিপাসুদের এক অনন্য আকর্ষণ।
🏨ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর: ভোলাগঞ্জকে বলা হয় "বাংলাদেশের কাশ্মীর"। ধলাই নদীর স্বচ্ছ পানি আর
নদীর তীরে ছড়িয়ে থাকা সাদা পাথর পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। তবে বর্তমানে কিছু দুস্কৃতিকারীদের কারণে এই স্থানটির সৌন্দর্য্য
নষ্ট হতে চলেছে।
🏨লালাখাল: স্বচ্ছ নীল পানির জন্য লালাখাল বিখ্যাত। এখানকার নদীতে নৌকায় ভ্রমণ এক
রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
🏨মালনীছড়া ও লাক্কাতুরা চা বাগান: উপমহাদেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ চা বাগান হলো মালনীছড়া চা বাগান। সবুজের সমারোহ
পর্যটকদের চোখ জুড়িয়ে দেয়।
🏨তামাবিল ও জৈন্তাপুর: ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা তামাবিল এবং প্রাচীন জৈন্তা রাজ্যের
রাজধানী জৈন্তাপুরে রয়েছে ঐতিহাসিক রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ।
🏨পান্থুমাই ও সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা: গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত এই দুটি ঝর্ণা বর্ষা মৌসুমে পর্যটকদের বিশেষভাবে
আকর্ষণ করে।
🏨অন্যান্য: এছাড়াও রয়েছে ডিবির হাওর, লোভাছড়া, কুলুমছড়া এবং জুগিরকান্দি মায়াবনের মতো আকর্ষণীয় স্থান।
২। সুনামগঞ্জ জেলা | Sunamganj District | হাওর-বাঁওড় আর লোকসংস্কৃতির পীঠস্থান :
লোকসংস্কৃতির কিংবদন্তী শিল্পী হাছন রাজার স্মৃতিবিজড়িত
জেলা সুনামগঞ্জ। এদিকে বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওর এই জেলাকে দিয়েছে
এক স্বতন্ত্র পরিচিতি। বর্ষায় এই হাওরের রূপ পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
🚣দর্শনীয় স্থান:
🏨টাঙ্গুয়ার হাওর: বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি হচ্ছে টাঙ্গুয়ার
হাওর। এই জলাভূমি জীববৈচিত্র্যের এক বিশাল রত্ন ভান্ডার। শীতকালে এখানে
ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে।
🏨নীলাদ্রি লেক (শহীদ সিরাজ লেক): টেকেরঘাটের চুনাপাথর খনির ঐ লেকের নাম নীলাদ্রি
লেক। নীলাদ্রি লেকের নীল পানি পর্যটকদের বিমোহিত করে।
🏨শিমুল বাগান: যাদুকাটা নদীর তীরে অবস্থিত এই বাগানটি শীতের শেষে ও বসন্তকালে হয়ে ওঠে রক্তিম আভায় রঙিন।
🏨যাদুকাটা নদী: মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা এই নদীর স্বচ্ছ পানি আর চারপাশের প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য অসাধারণ।
🏨বারেক টিলা (বারিক্কা টিলা): টিলার উপর থেকে যাদুকাটা নদী আর মেঘালয়ের পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
🏨হাছন রাজার জাদুঘর: সুনামগঞ্জ শহরে হাছন রাজার জাদুঘরটি অবস্থিত। এই জাদুঘরে মরমি কবি হাছন রাজার ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও গানের পান্ডুলিপি
সংরক্ষিত আছে।
🏨অন্যান্য: এছাড়া গৌরারং জমিদার বাড়ী, নারায়ণতলা, ডলুরা শহীদদের সমাধি সৌধ এবং পাগলা বড় জামে মসজিদ এখানকার উল্লেখযোগ্য স্থান।
৩। মৌলভীবাজার জেলা | Moulvibazar District | চায়ের রাজধানী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার :
বাংলাদেশের "চায়ের রাজধানী" হিসেবে খ্যাত ও পরিচিত মৌলভীবাজার জেলা। মাইলের পর মাইল বিস্তৃত চা
বাগান এই জেলার প্রধান আকর্ষণ। এছাড়াও এখানে রয়েছে জলপ্রপাত, জাতীয় উদ্যান ও হাওরের অপূর্ব সমাহার।
🚣দর্শনীয় স্থান:
🏨লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান: বিভিন্ন প্রজাতির বিরল বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ও উদ্ভিদের সমাহার এই উদ্যান।
🏨মাধবকুণ্ড ও পরিকুণ্ড জলপ্রপাত: বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত ও সুউচ্চ জলপ্রপাত হলো মাধবকুণ্ড। এর কাছেই রয়েছে
পরিকুণ্ড জলপ্রপাত। দর্শনার্থীরা একসাথে
দুটি মোহনীয় স্থান দর্শন করতে পারে বলে এখানে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
🏨শ্রীমঙ্গল: চা বাগানের জন্য বিখ্যাত ও সুপরিচিত এই
শ্রীমঙ্গলকে বলা হয় "দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ"। বাংলাদেশ
চা গবেষণা ইনস্টিটিউটও এখানেই অবস্থিত।
🏨মাধবপুর লেক: চা বাগানের মনোরম পরিবেশের মাঝেই অবস্থিত এই
কৃত্রিম হ্রদটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
🏨হাকালুকি হাওর: বাংলাদেশের বৃহত্তম এই হাওরটি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলা জুড়ে বিস্তৃত। বর্ষাকালে এসব হাওরের
দৃশ্য মনোরম আর আকর্ষনীয় হয়ে উঠে।
🏨হামহাম জলপ্রপাত: কমলগঞ্জ উপজেলার গভীরে অবস্থিত এই জলপ্রপাতটি ট্রেকিংপ্রেমীদের জন্য এক আদর্শ
জায়গা। এখানেও প্রতিনিয়ত শত শত দর্শকের ভিড় দেখা যায়।
🏨অন্যান্য: এছাড়াও রয়েছে বাইক্কা বিল, পৃথিমপাশা নবাব বাড়ি, কমলারাণীর দীঘি এবং বর্ষিজোড়া ইকোপার্কের মতো দর্শনীয় স্থান।
৪। হবিগঞ্জ জেলা | Habiganj District | ইতিহাস, ঐতিহ্য আর প্রকৃতির অপূর্ব মিলন :
ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ হবিগঞ্জ জেলা। মুক্তিযুদ্ধের
স্মৃতিবিজড়িত তেলিয়াপাড়া থেকে শুরু করে এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং এই জেলাতেই
অবস্থিত।
🚣দর্শনীয় স্থান:
🏨সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান: বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এই উদ্যানটি পাখিপ্রেমীদের জন্য ভ্রমনস্বর্গ।
🏨রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল এটি। এটিও বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
🏨বানিয়াচং: "এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম" হিসেবে পরিচিত এই স্থানটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে ভরপুর।
🏨তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম বৈঠক এখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা এই স্থানটিকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব দিয়েছে।
🏨কমলারাণীর সাগরদিঘী: বানিয়াচং এ অবস্থিত এই বিশাল দিঘি নিয়ে অনেক লোককথা প্রচলিত আছে। যা দেখার জন্য অসংখ্য পর্যটক সেখানে ভ্রমনে যায়।
🏨অন্যান্য: এছাড়া বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড, শংকরপাশা শাহী মসজিদ, এবং হবিগঞ্জ রাজবাড়ির মতো স্থানগুলোও উল্লেখযোগ্য।
সিলেট বিভাগের প্রতিটি জেলাই যেন প্রকৃতির আপন খেয়ালে গড়া
এক একটি সৌন্দর্যের আধার। এখানকার মানুষের অতিথিপরায়ণতা ও সরল জীবনযাত্রা
পর্যটকদের দেয় এক ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা। তাই সুযোগ পেলে ঘুরে আসুন প্রকৃতির এই
অপরূপ রাজ্য থেকে।
পোস্ট কি-ওয়ার্ড | Post Keyword :
সিলেটের দর্শনীয় স্থান | জাফলং ও
বিছানাকান্দি ভ্রমণ
| রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট | টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ গাইড | লাদেশের চায়ের
রাজধানী শ্রীমঙ্গল
| মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত | সুনামগঞ্জের
পর্যটন কেন্দ্র
| মৌলভীবাজারের চা বাগান | হবিগঞ্জের
ঐতিহাসিক স্থান
| সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
প্রশ্নোত্তর | FAQ
প্রশ্ন ১: সিলেট বিভাগ কোন কোন জেলা নিয়ে গঠিত?
উত্তর: সিলেট বিভাগ মূলত চারটি জেলা নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো: সিলেট, সুনামগঞ্জ,
মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ।
প্রশ্ন ২: "বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী" বলা
হয় কোন শহরকে এবং কেন?
উত্তর: সিলেট শহরকে "বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী" বলা হয়। কারণ এখানে
বিশিষ্ট ইসলাম প্রচারক হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার শরীফ
অবস্থিত,
যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো মানুষের কাছে একটি পবিত্র ও
সম্মানিত স্থান।
প্রশ্ন ৩: বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন বা সোয়াম্প
ফরেস্টের নাম কী এবং এটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: বাংলাদেশের একমাত্র স্বীকৃত মিঠাপানির জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট হলো রাতারগুল, যা সিলেট জেলায় অবস্থিত।
প্রশ্ন ৪: "প্রকৃতির কন্যা" হিসেবে পরিচিত স্থান
কোনটি এবং এর প্রধান আকর্ষণ কী?
উত্তর: জাফলং "প্রকৃতির কন্যা" হিসেবে পরিচিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে
আসা স্বচ্ছ পানির পিয়াইন নদী এবং এর তীরে ছড়িয়ে থাকা নুড়ি পাথর জাফলং-এর
প্রধান আকর্ষণ।
প্রশ্ন ৫: বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি
কোনটি এবং এটি কোন জেলায় অবস্থিত?
উত্তর: বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি হলো টাঙ্গুয়ার হাওর, যা সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। জীববৈচিত্র্য এবং শীতকালে অতিথি পাখির আগমনের
জন্য এটি বিখ্যাত।
প্রশ্ন ৬: "দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ" বলা হয়
কোন অঞ্চলকে এবং কেন?
উত্তর: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে "দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ" বলা
হয়। কারণ এটি মাইলের পর মাইল বিস্তৃত চা বাগানের জন্য বিখ্যাত এবং বাংলাদেশের
"চায়ের রাজধানী" হিসেবে পরিচিত।
প্রশ্ন ৭: বাংলাদেশের অন্যতম সুউচ্চ জলপ্রপাত কোনটি এবং এটি
কোন জেলায় অবস্থিত?
উত্তর: বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত ও সুউচ্চ জলপ্রপাত হলো মাধবকুণ্ড। এটি মৌলভীবাজার
জেলায় অবস্থিত। এর কাছেই পরিকুণ্ড নামে আরেকটি জলপ্রপাত রয়েছে।
প্রশ্ন ৮: "এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম"
হিসেবে পরিচিত স্থান কোনটি এবং এটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং "এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম" হিসেবে
পরিচিত। এটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে পরিপূর্ণ একটি স্থান।
আরো পড়ুন-
১.
২.
৩.
No comments